Recent Posts

কীভাবে এলো রুবিক্স কিউব


Erno Rubik


হরেক রকম রং মিলিয়ে এক ঘনকাকার বস্তু, সেটা আবার বিভিন্ন দিকে ঘটাং ঘটাং করে ঘোরানো যায়! কেউ চট করে সবগুলো দিক মিলিয়ে ফেলে, আবার কেউ বা সারাদিন চেষ্টা করেও এক দিক মেলাতে পারে না। হ্যাঁ, বলছিলাম রুবিক্স কিউবের কথা!

রুবিক্স কিউব হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করেন নি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কোথা থেকে এলো এই রুবিক্স কিউব? এই ঘনক নিয়ে পুরো বিশ্বে এত মাতামাতি কেন?
 

রুবিক্স কিউবের ইতিহাস

হাঙ্গেরির স্থাপত্যবিদ্যার এক অধ্যাপক এর্নো রুবিক। তিনি প্রথম কাঠের টুকরো দিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক ঘনক বানিয়ে ফেলেন এবং এর ছয়টি দিক ছয়টি ভিন্ন রঙে সজ্জিত করেন। কৌতূহলবশত কাঠের ব্লকগুলো এলোমেলো করলেন তিনি। এরপর অবাক হয়ে লক্ষ করলেন, এবার নিজেই আর এগুলোকে মেলাতে পারছেন না!  

রুবিক তাঁর একটি অপ্রকাশিত স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে বলেন, “এটা এমন যে আমার মনে হচ্ছিল আমি একটা লিখার দিকে তাকিয়ে আছি যেটাতে একটা গোপন কোড লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু আমার ভেবেই ভালো লাগছিল যে, আমি নিজেই এই কোডের স্রষ্টা। যদিও আমি এটা পড়তে পারছিলাম না। এটা সত্যিই অসাধারণ একটি মুহুর্ত যেটা আমি সহজে মেনে নিতে পারছিলাম না।

Erno Rubik and his daughter
এর্নো রুবিক ও তাঁর মেয়ে, ছবি - দ্য গার্ডিয়ান


এভাবে রুবিক্স কিউবের জন্ম হলো ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৭ সালে বুদাপেস্টের দোকানগুলোতে এটি খেলনা হিসেবে বিক্রি হতে লাগল। এটির তৎকালীন নাম ছিক ‘ম্যাজিক কিউব’, পরবর্তীতে ‘আইডিয়াল টয়েজ’ নামের এক কোম্পানি এর নাম দেয় রুবিক’স কিউব।

১৯৮০ সাল নাগাদ এটি লন্ডন, প্যারিসসহ বিভিন্ন স্থানে এটি বিস্তার লাভ করে। এ বছরই এটি “জার্মানী গেম অফ দ্য ইয়ার” সম্মাননা লাভ করে। ধীরে ধীরে এটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়,আ১৯৮০-১৯৮৩ এর মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন রুবিক্স কিউব পুরো বিশ্বে বিক্রি হয়।

রুবিক্স কিউবের মোট সজ্জার সংখ্যা ৪৩,২৫২০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০ (প্রায় চুয়াল্লিশ কোয়াইনট্রিলিয়ন)! আর মাত্র ৫৭ মিলিমিটারের এক কিউবের সব সম্ভাব্যতাকে যদি একই তলে পাশাপাশি মেলে ধরা হয়, তাহলে প্রায় ২৬১ আলোকবর্ষ দূরে গিয়ে ঠেকবে, আর পৃথিবীকে মুড়ে দেয়া যাবে ২৭৩ বার।

Rubiks Cube and Puzzle Collection



রুবিক্স কিউব মেলানোর নানা পদ্ধতি

১৯৮১ সালে দশটি বেস্টসেলার বইয়ের তিনটিই ছিল রুবিক্স কিউবের ওপর। ১৯৮০ র দিকে ডেভিড সিংমাস্টার সর্বপ্রথম লেয়ার বাই লেয়ার নামে একটি পদ্ধতির প্রচলন করেন, যা আজও বিগিনার পদ্ধতি নামে পরিচিত। যারা বন্ধুর কাছ থেকে সূত্র লিখে নিয়ে নতুন নতুন কিউবিং শেখে, তারা আসলে এই পদ্ধতিই শিখে থাকে।

এরপর আসে আরেকটু এডভান্সড পদ্ধতি। বেশিরভাগ স্পীডকিউবার এখনো Fridrich পদ্ধতিই ব্যবহার করে থাকেন। জেসিকা ফ্রিডরিচ নামের এক ভদ্রমহিলা এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন ১৯৯৭ সালে। একে স্পীডকিউবারগণ CFOP Method বলে থাকে। মূলত চারটি ধাপে এখানে কিউবটি মেলানো হয়, এই ধাপগুলোর প্রথম অক্ষর নিয়েই CFOP [Cross, F2L(First Two Layer), OLL(Orientation of Last Layer), PLL(Permutation of Last Layer)]।

জেসিকা ফ্রিড্রিচ


আরও কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো Ruox, ZZ ইত্যাদি। কিউবারের ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে বিভিন্ন পন্থা ব্যবহার করেন।

বাংলায় CFOP Method শেখার বেশ ভাল রিসোর্স হলোঃ Online Free Education BD, Cuber errOr। ইংরেজিতে শিখতে পারেন J Perm থেকে।

বিভিন্ন রেকর্ড

এক রুবিক্স কিউব যে কতভাবে মেলানোর প্রতিযোগিতা আছে, আপনি জানলে অবাক না হয়ে পারবেন না।

  • সাধারণভাবে আমজনতা যাকে কিউবিং মনে করেন
  • One-handed (এক হাতে মেলানো)
  • Blindfolded (চোখ বেঁধে মেলানো)
  • Feet solving (পা দিয়ে মেলানো)
  • Fewest Move 

    প্রথম কিউবিংয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন মিন থাই, ১৯৮২ সালে (২২.৯৫ সেকেন্ড)।

    World Cube Assosiation (WCA, প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে) এর মতে এখন পর্যন্ত (২০১৯) 3x3 কিউবের সিঙ্গেল রেকর্ড Youshrenh Du এর ৩.৪৭ সেকেন্ড। তবে কিউবিংয়ের দুনিয়ায় সিঙ্গেল দিয়ে যতটা বিচার করা হয়, তার চেয়ে বেশি দাম দেয়া হয় এভারেজ হিসেবে; কারণ সিঙ্গেল অনেক  ক্ষেত্রেই ভাগ্যের জোরে ভাল হতে পারে! একটা কম্পিটিশনে হয়ত পাঁচটি সল্ভের এভারেজ করা হয় (একে কিউবিংয়ের ভাষায় বলে Ao5,মানে Average of 5)। এরকম এভারেজের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ান স্পীডকিউবার Feliks Zemdegs এর ৫.৫৩ সেকেন্ড।



    One-handed (এক হাতে মেলানো) এ রেকর্ড ম্যাক্স পার্কের (সিঙ্গেল ও এভারেজ দুটিতেই)। সিঙ্গেলে ৬.৮২ সেকেন্ড, আর এভারেজে ৯.৪২ সেকেন্ড। ম্যাক্স পার্ক কিউবিংয়ের জগতে সবচেয়ে বেশি রেকর্ডধারী। তাঁর রেকর্ড রয়েছে 4x4 avg, 5x5 single & avg, 6x6 single & avg, 7x7 single & avg, 3x3 one habded!

    বাংলাদেশে 3x3 সিঙ্গেলে বেস্ট ৬.৯৩ সেকেন্ড (তাওসিফ আমিন সাহিল, Knights Cubing Open 2019), ভারতে ৪.৯১ সেকেন্ড (Aryan Chhabra, SNU Autumn Open 2019)।



    বাংলাদেশে কিউবিং এই পর্যায়ে আনতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন সাকিব ইবনে রশীদ রিভু

    3x3 এর পাশাপাশি জনপ্রিয় পাজলগুলো হল 2x2, 4x4, 5x5, 6x6, 7x7, megaminx, square, pyraminx, clock, skewb ইত্যাদি।


    হরেক রকম কিউবের ব্র্যান্ড

    কিউবিং জগতে সবচেয়ে বিখ্যাত ব্র্যান্ড Gan Cube। এছাড়া রয়েছে Rubik's brand (original), WitEden, V-Cube, MoYu, QiYi, Yuxin, Cyclone Boys, DaYan, QJ, X-Man, Valk এগুলোর বিভিন্ন ভার্সন। এগুলোতে আবার রয়েছে ম্যাগনেট লাগানোর সুবিধা (স্ট্যাবল করার জন্য), লুব্রিকেন্ট দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ।

    gan 356 air sm cube

    GAN 356 AIR SM speed cube (বাজারমূল্য 4000 BDT)



    শিখতে হলে রুবিক্স কিউব

    ধাপ-০ঃ বাজারে পাওয়া যায় এমন একটি কিউব কিনে নিন। ইউটিউবে ঘাঁটাঘাঁটি করে বিগিনার মেথডটা শিখে নিন (কয়েকটি প্রয়োজনীয় রিসোর্সঃ Cuber errOr Beginner Method, Singer Sakib Official)। মোটামুটি সময় দিয়ে প্রাকটিস চালিয়ে গেলে আপনি মাস দুয়েকের মাঝে এই পদ্ধতিতে প্রায় ৪৫-৫০ সেকেন্ডের মধ্যে চলে আসতে পারবেন।

    ধাপ-১ঃ এবার আপনার সময় এসেছে স্পীডকিউবিং শেখার। cubicle.us বা অন্য কোন দেশীয় অনলাইনভিত্তিক কিউবশপ (CubeNation, RMCubeColleciton) ছাড়া আপনি বাংলাদেশের কোন সুপার শপেও স্পীডকিউব খুঁজে পাবেন না। শুরুতে আপনি Yuxin Little Magic বা এই জাতীয় বাজেট কিউব দিয়ে শুরু করতে পারেন। কারন এই সময়ে ম্যাগনেটিক বা বেশি বাজেটের কিউব ব্যবহার করার বয়স আপনার হয় নি! CFOP বা অন্য কোন পছন্দসই পদ্ধতি বেছে নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করে দিন। CFOP শুরু করলে 2 look পদ্ধতিগুলো শুরুতে শিখে নিতে পারেন।

    ধাপ-২,৩,৪… ঃ প্র্যাকটিস করুন। WCA তে register করে আপনিও হতে পারেন রেকর্ডের মালিক!


    React

    Share with your friends!

    Comments