Recent Posts

বন্ধু চল রোদ্দুরে, মন কেমন মাঠজুড়ে


কলেজ জীবনে আমাদের সঙ্গে ভীষণ মোটা একটা ছেলে পড়ত। তার বস্তার মত মোটা হওয়ার পেছনে কোন রহস্য আছে কিনা আমার জানা নেই, তবে দুইরকম খাদ্যের প্রতি তার অন্যরকম টান ছিল, চুষে খাওয়ার খাদ্য, আর ফুঁকে খাওয়ার খাদ্য। পৃথিবীর তাবৎ মহাপুরুষের ফুঁকে খাওয়ার খাদ্যের প্রতি আসক্তি ছিল, এতে আমার কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু যে মানুষ ফুঁকে খাওয়ার মত কাজ করতে পারে, সে কীভাবে চুষে খাওয়ার খাদ্য চাইতে গিয়ে প্যারেন্টস ডে এর আগেরদিন ফোনে বলে, “মা মা, আমার জন্য বাঁশিওয়ালা ললিপপ নিয়ে এসো!”
এই সেই সোয়াদ, আজ সেই সোয়াদের জন্মদিন। যা হোক, বয়স যেন কত হলো? জন্ম তো ২০০২ এ, না?

আমার মুখ এবং লেখার হাত, দুইই ভীষণ নোংরা, এই খবর আমার বন্ধুরা বাদে বেশি কেউ জানে না। তার ওপর যদি বলতে যাই সোয়াদের কথা, তা হলে একটা ভাল কথাও আসবে না। এজন্য এই লেখায় হাত দেওয়ার আগে আমি অজু করে নিলাম, যাতে এরকম একটা পাবলিক জায়গায় বেশি জঘন্য কথাগুলো বের হয়ে না আসে।
যা হোক, সেদিন স্বপ্নে দেখলাম, হাই স্কুলে অঙ্কের মাস্টার হয়েছি। প্রশ্ন করার সময় কেন জানি অঙ্ক না দিয়ে ব্যাখ্যা লিখতে দিয়েছি – বাংলা গালি হিসেবে বাঞ্চোৎ এর যথার্থতা নিরূপণ করো। সবাই পাঁচ-ছয় পাতার রচনা লিখে দিয়েছে, কিন্তু কারোটাই যুতসই মনে হচ্ছে না। হঠাৎ দেখি একজন ছোট্ট করে লিখেছে, “যাহাই সোয়াদ, তাহাই বাঞ্চোৎ!” পাটিগণিতের এক পরীক্ষায় কিশোর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ওপর খুশি হয়ে তাঁর শিক্ষক একবার তাঁকে একশতে একশ দশ দিয়েছিলেন। এই যথাযথ উত্তর দেখে আমি প্রচণ্ড খুশি হয়ে সেরকম কিছু একটা করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু তার আগেই ঘুমটা ভেঙে গেল। অন্তরে অতৃপ্তি নিয়ে উঠে দেখি সোয়াদের মেসেজ, “দোস্ত, এই অঙ্কটা করে দে, একটা মেয়েকে করে দিতে হবে।“ তৎক্ষণাৎ আরও বিশ্রী কিছু গালি গিয়ে বাসি সকাল শুরু করলাম। কয়েকদিন পরেই দেখি সোয়াদের জন্মদিন! এরকম সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। আজ এমন টাইট দিয়ে ছেড়ে দেব, আমার কাছে অঙ্ক করে মেয়েদের পাঠানোর কথা চিন্তাও করবি না!

ক্লাস সেভেনে আমি একটু মোটাতাজা ছিলাম, সব থেকে রোগা-পটকা ছিল
Ahmmed
। ক্লাস সেভেনের প্রথম মেডিকেলে সবাই শান্তি ও সাম্যের প্রতীক সাদা জাঙ্গিয়া পরে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় একসাথে বসে আছি। পরিস্থিতিটা এমন কেউ নড়েচড়ে বসলেই তার সদ্য কৈশোরে বিকশিত বাবুই পক্ষী সূক্ষ্ম আবরণের আড়াল থেকে এমনভাবে উঁকি দিচ্ছে, বাইরে থেকেও তার আকার আকৃতি নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকছে না। একেকজনকে পর্দার আড়ালে নিয়ে এই শান্তির সাদা পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে, আর মেডিকেল স্টাফের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, “এ কী অবস্থা, এ তো পুরো জঙ্গল! একদম আগুন লাগিয়ে দেব! পরিষ্কার করে কালকে রিপোর্ট!” তারপর বাইরে এসে সেরকম প্রায় নগ্নগাত্র বিভীষিকা অবস্থাতেই বুকের মাপ, উচ্চতা, ওজন – এসব নেয়া হচ্ছে। ওজন মাপের সময় দেখা গেল, সেই রোগা-পটকা আহম্মেদের ওজন ৩৪ কেজি, আর সোয়াদের ওজন ৬৮ কেজি! একটা ক্লাস সেভেনের বাচ্চার ওজন আরেকজনের ওজনের পুরো দ্বিগুণ! এর পর থেকে প্রতি মেডিকেলেই সোয়াদের ওজন নেয়ার সময় আশেপাশে ছোটখাট ভিড় লেগে যেত।

ক্লাস সেভেনে ফর্মে গিয়ে দেখলাম পুরো রাজকীয় ব্যাপার, ইংরেজি ছাড়া কোন পড়াশোনা নাই! আমি মূর্খ মানুষ, একেবারে গলদঘর্ম অবস্থা। এদিকে কয়েকজন ছিল ইংরেজি মাধ্যম থেকে আসা, এদের ভাবসাব দেখলেই মনে হত একেকটা উচ্চশিক্ষিত ছেলেপেলে, ইংরেজির জাহাজ, জীবনেও বাংলায় কথা বলে নাই; হিস্যু করার সময়ও দেখি ইংরেজিতে পারমিশন নেয়। আমরা মীনার কার্টুন দেখা বাঙালি, সারাজীবন শুনে এসেছি, “স্বাস্থসম্মত পায়খানা”। এরা আবার সেই স্বাস্থসম্মত পায়খানাকে আদর করে ওয়াশরুম, ফ্রেশরুম বলে ডাকে! আমরা বাকিরা একেকজন এতই অথর্ব যে, কাউকে “স্যার, পায়খানা করতে যাব”, “স্যার, মুততে যাব” এসবও বলতে শুনেছি, ঠিক না ]
Islam
, রাফসান? যাই হোক, এরকম এক ইংরেজি সাহেব ছিল আমাদের সোয়াদ। আমরা তখনো অনুবাদ বই ঠিকমত পড়তে পারি না, এর মধ্যে দেখি সোয়াদ ইংরেজি উপন্যাস চোখের সামনে নিয়ে বসে থাকে, ভয়ঙ্কর অবস্থা! ক্লাস সেভেনের সোয়াদ সম্পর্কে আমার বেশিকিছু মনে নেই। তবে যেটুকু মনে আছে, তার সবটার সাথেই
Ishtiaque
জড়িত। দুইজনই আগে একই স্কুলে পড়তো, দুইজনের সীটও পাশাপাশি। সারাদিন দেখা যায়, সোয়াদ আর ইশতিয়াক একজনের সাথে আরেকজনের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত। আমার ধারণা, সোয়াদের অবচেতন মনের যে অংশে সমকামিতার আবেগটি বেড়ে উঠেছে, তার জন্ম এখান থেকেই। যথাসময়ে এ বিষয়ে বলা হবে।

সোয়াদ ছোটবেলা থেকেই একটা পিক্যুলিয়ার জন্তু হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। রংপুর চিড়িয়াখানায় সবরকমের আকর্ষণীয় জন্তু সরিয়ে যদি কেবল কিম্ভূত তথাপি দর্শনীয় সোয়াদকে লালপাছার বাঁদরের মত ন্যাংটো করে রাখা হয়, তাহলে সেই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর ভিড় বাড়বে বই কমবে না। সেই দর্শনীয় সোয়াদের সব ঘটনা আমার মনে নেই, কিংবা সব হয়ত জানিও না। যতদূর মনে পড়ে সেগুলোই উল্লেখ করার চেষ্টা করবো।

আমাদের মধ্যে সোয়াদ শুরু থেকেই বিখ্যাত। আর পুরো কলেজে সবাই বস্তার মত এই ছেলেটাকে চিনে ফেললো ক্লাস এইটে প্রথম ফুটবল কম্পিটিশনে আত্মঘাতী গোল দেয়ায়। আমাদের বিবিকে তে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিল সোয়াদ। সেই উপলক্ষে বিবিকে পার্টিতে সোয়াদের অবস্থান বেশ শক্ত। সাধারণত আমাদের পার্টিতে মেন্যু থাকতো ঝালমুড়ি আর কোন কোল্ড ড্রিংকস, খুবই সামান্য ব্যবস্থা। কিন্তু এই স্মৃতিগুলোই সম্ভবত আমাদের মনে বড় বড় পার্টির থেকে দীর্ঘস্থায়ী রয়ে যাবে। যাহোক, ঝালমুড়িতে তেল অত্যাবশ্যক। কিন্তু এই তেল দেওয়ার সময় সোয়াদের আপত্তি শুরু হত। এমনকি তেল যাতে না দেওয়া হয়, সেজন্য এই তেলের মালিক তেল কোথায় মালিশ করেছে এবং কী কী হারাম কাজে কীভাবে ব্যবহার করেছে সেসব বিশদ আলোচনা করতেও সোয়াদ কখনো কুণ্ঠা বোধ করতো না। তবু আমরা তেল দিতাম এবং তেল দেওয়ার আগেই সোয়াদ মুড়ি-চানাচুরের একটা অংশ পেয়ে যেত। কিন্তু তেল দেওয়ার পরেও যেভাবে সোয়াদকে হামলে পড়তে দেখেছি, তার কাছে পুরুষের অনেক দিনের তৃষিত কামনাও নস্যি!

এর মধ্যে ইন্টার হাউজ ফুটবল কম্পিটিশনে একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমাদেরই ক্লাসমেট Mahmud তার নিজের দলের এক বড় ভাইয়ের অণ্ডকোষে আঘাত করে বিচি বিদীর্ণ করার মতো একটা হৃদয় বিদারক কাণ্ড করে ফেলল। অবশ্য কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। (এই বিষয়টা লঘু করে বললেও ঘটনাটা সত্যি কষ্টের এবং এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না। ভাইয়ের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বললাম।) কাকতালীয়ভাবে ভাইয়ের নামের সাথে আমার নামটা মিলে যায়। এই ঘটনার পর থেকে সোয়াদ আমাকে “বিচি” নামে ডাকা শুরু করলো। ক্যাডেট কলেজে সবার টীজনাম থাকে। তবে আগে আমার যে নামগুলো ছিল, সেগুলো আমার তেমন পছন্দের না। কিন্তু এই নামটা আমার বেশ মনে ধরে গেল। পরবির্তীতে এই নামই আমার ক্যাডেট জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বলবৎ রইল। সোয়াদ জীবনে কোন ভাল কাজ করেছে বলে আমার মনে পড়ে না, তবে এই একটা কাজের জন্য আমি সোয়াদকে খুব পছন্দ করি। এই নামে এখনো কেউ ডাকলে আমার কত স্মৃতি মনে পড়ে যায়, আর মনে পড়ে যায় আমার বন্ধু সোয়াদের কথা।

ফর্মে
Hamim
কে টিজ করার এক অভিনব কায়দা ছিল। সবাই হামীমকে ঘিরে যে মহান কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে টিজ করা হতো, সেটাও সোয়াদের আবিষ্কার। ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়, হামীমের সেই নাম সামান্য বিকৃত করে সোয়াদকেও “দুম্বা” বলে একই কায়দায় মাঝে মাঝে টীজের শিকার হতে হতো।

আমাদের কলেজের গণিত ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের নাম নাম কীভাবে যেন পরিবর্তিত হয়ে যায়। কেতাব স্যারকে আমরা বলি কাতাব স্যার, ফাইয়েজুর রহমান স্যারকে আমরা বলি ফিয়াজ স্যার! যা হোক, ফাইয়েজুর রহমান স্যারের খাতা দেখার পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত নিখুঁত। তাঁর জ্যামিতির প্রমাণ করানোর সময় এমন ভাষা ব্যবহার করতেন যে সেখান থেকে আমি অনেক নতুন ইংরেজি শব্দ শিখেছি। তবে তিনি অত্যন্ত ভাল পড়াতেন আর প্রচণ্ড সৎ মানুষ ছিলেন। একদিন খাতা দিতে এসে প্রথমে বহুনির্বচনী অংশ দিলেন। খাতা দেওয়ার সময় তাঁর একটা অভ্যাস ছিল, তিনি সবার নম্বর চেক করতেন। সোয়াদের খাতায় দেখা গেল সোয়াদ পেয়েছে সর্বোচ্চ নম্বর। স্যার ভীষণ খুশি হয়ে গেলেন, “বাঃ, সোয়াদ বাবা, তুমি তো খুব ভাল করেছো!” এরপর সৃজনশীল অংশের খাতা দেওয়ার সময় দেখা গেল সোয়াদ কোনরকমে পাশ নম্বর পেয়েছে! এবার স্যার অবাক হয়ে গেলেন। স্যারের একটা অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল, এমনভাবে কথা বলতেন যে খুব স্বাভাবিক কথাতেও মানুষকে হাসাতে পারতেন। স্যার বললেন, “কী রে বাবা, দেখাদেখি করেছো নাকি!” সাথে সাথে আমরা হাসিতে ভেঙে পড়লাম। এমন সময় সোয়াদ তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বললো, “বুকে হাত দিয়ে বলছি স্যার, কোন দু নম্বরি করি নি!” স্যারের এই বিষয়টার প্রতি দুর্বলতা ছিল। তাঁর বিশ্বাস বুকে হাত দিয়ে কেউ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। স্যার হয়ত ভাবলেন, খোদা চাইলে জগতে কত অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে, আর এটা তো সাধারণ ব্যাপার। অতএব, পরেরজনের খাতায় গ্রাফ ভাল হয় নি বিধায় আমাদের গ্রাফ আর সাপের মধ্যে মিল দেখানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, আমরাও স্যারের কথায় হাসতে থাকলাম।

সোয়াদের শরীর অত্যন্ত ভারি, আগেই বলেছি। সম্ভবত এই কারণে দূর থেকে সোয়াদকে দেখলে সবসময় একটা আটার বস্তার মত মনে হয়। ক্যাডেট কলেজ থেকে যেসব ড্রেস দেয়া হত, সেগুলো এত ঢিলেঢালা ছিল, যে মনে হত টেইলারের জায়গায় বশির ভাই (আমাদের কলেজের নাপিত) সেগুলো বানিয়েছেন। কিন্তু আইটেম গানের নায়িকাদের মত সোয়াদ সবসময় টাইট-ফিটিং জামাকাপড় পরত। এতে করে সোয়াদকে হ্যান্ডসাম মনে হতো কিনা, তা জানি না, তবে আটার বস্তা আরেকটু ভরা ভরা লাগত, সেকথা হলফ করে বলতে পারি।

ভারতীয় মডেল প্রিয়া প্রকাশ বিখ্যাত হয়েছিলেন তাঁর চোখের ভাষার কারণে। আমার ধারণা চোখের ভাষার দিক থেকে সোয়াদের আশেপাশেও কেউ থাকবে না। কেন জানি না, সোয়াদের রাগিব আর জুবায়েরের ওপর আলাদা একটা অনুরাগ ছিল। ডিনার থেকে আসার পথে চাঁদের আলোয় হয়ত সোয়াদের মধ্যেও একটা বৈরাগ্য চলে আসতো! এই সময় এদের কারও পেছনে গিয়ে এমনভাবে তাকিয়ে কোথায় যে হারিয়ে যেত! কী ছিল না সেই দৃষ্টিতে, লোভ-লালসা, ক্ষুধা… ওই যে বললাম, ওজু করে বসেছি, এবার থামতে হবে। আমি বেশিদূর যাব না। তবে এইসময় আশেপাশে কাউকে পেলে সেই মোহনীয় চোখের ভাষায় এমনভাবে দেখিয়ে দিত, এটা যে দেখে নি, তাকে বোঝানো শক্ত।

রংপুর ক্যাডেট কলেজ পাবনা না। এরা কামলা হতে পারে, কিন্তু সমকামী না, সোয়াদও সমকামী না। তবে সম্ভবত সোয়াদের মূলমন্ত্র ছিল, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে গিয়ে সোয়াদের মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন চলে আসলো। তবে এই পরিবর্তন নজর দেওয়ার চেয়ে বেশি কিছু করে নি বলে আমার বিশ্বাস। তবে করে ফেললেও খুব অবাক হতাম না! এরই মধ্যে ইলিয়াস স্যার পাবনা থেকে এলেন। অভিজ্ঞ শিক্ষক, এক দেখাতেই সোয়াদকে চিনে ফেললেন। স্যারের একটা ডায়ালগ ছিল, দুইজনকে একই বেডে বসতে দেখলেই তিনি বলতেন, “ছি ছি ছি, সামুদ নাকি!” (ইসলাম ধর্মমতে সামুদ জাতির সমকামিতার জন্য স্রষ্টার আদেশে তাদের ভূখণ্ড উল্টিয়ে দেয়া হয়।) তবে স্যার এটা হাসি তামাশা করেই বলতেন, কেউ যেন মনে না করে আমি স্যারকে খুব নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করছি। যা হোক, সোয়াদকে চিনে ফেলার পর তিনি বলতে শুরু করলেন, “ছি ছি ছি, সোয়াদ নাকি!”

পর্নোগ্রাফি কিংবা যৌনতার প্রতি সোয়াদের একটা আলাদা ভাললাগা ছিল। এমনকি ফর্মেও আবেদনময়ী মডেলদের পেপারকাটিং সবসময় সোয়াদের ডেস্কে থাকত! এটা দোষের কিছু না। তবে এর ফল সমসময় শুভ হয় না। টুয়েলভে অনেকে স্ট্যাট ফর্মে পড়তে চলে গেল। কিন্তু পড়ার নামে সেখানে মাঝে মাঝে সীমিত নীল ছবির চর্চা হতো। এই খবরে সোয়াদ উচ্ছসিত হয়ে উঠল। কিন্তু গিয়ে দেখলো স্ট্যাট ফর্মে কোন সীট ফাঁকা নেই। অনেক কষ্টে এক পিরিয়ডের জন্য একটা সীট জোগাড় করা হলো এবং প্রতিদিনই সোয়াদ সেখানে হানা দিতে থাকল। সোয়াদ গেলেই, “মামা, দেখা না, দেখা না!” বলে আবদার জুড়ে দিত এবং কিছুক্ষণ দেখার পর সেই বাবুই পাখির গায়ে সুড়সুড়ি দিতে ‘স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা’য় চলে যেত। স্রষ্টার কৃপায় বেশিদিন এই কাজ চলে নি। স্ট্যাট ফর্মের ছেলেরা বুদ্ধি করে সোয়াদকে এই কুকর্ম থেকে রক্ষা করলো, তবে কীভাবে করলো, “এঁটা আমঁরা জাঁনি, কিন্তুঁ বলঁবো নাঁ!” এটা বলার মত কোন বিষয় না। একটা কথা বলা যেতে পারে, পরবর্তীতে ওই ভিডিও চিত্রটি ডিলিট করে ফেলা হয়েছিল।

আমাদের ফর্মে রাফসানের বাঁশ নামে এক বিশেষ ধরণের বাঁশ ছিল। কেউ সিট থেকে উঠলে তার চেয়ারে কলমের হেড, কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে বোর্ডপিন পর্যন্ত রাখা হতো। এই তথাকথিত বাঁশের ওপর ছেলেরা যখন বসতো, তাদের অভিব্যক্তি থাকত দেখার মতো! এরকম একদিন রাগিবের সিটে বাঁশ দেয়া হয়েছে। এবার আর সেরকম কোন ভিডিও চিত্র না, পুরোপুরি বাংলা সিনেমার নায়কের মত সোয়াদ রাগিবকে বাঁচাতে চলে এল। যেহেতু সোয়াদের একটু বেশি দরদ ছিল, বসার আগেই সোয়াদ তাকে সব বলে দিল। ফলস্বরূপ,
Ragib
এই বাঁশের হাত থেকে বেঁচে গেল। ঘটনা এইটুকুই। কিন্তু বাকিদের মনে বিদ্রোহ জেগে উঠল। জনগণের রোষের মুখে পড়ে সিদ্ধান্ত হলো সোয়াদের সেন্ট্রাল গণ। সেন্ট্রাল গণ আরেকটা দেখার মত জিনিস! ফাঁসির আসামিকে যেমন পায়ে বেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেরকম প্রেপের পরে কয়েকজন ধরে নিয়ে যাওয়া হতো, যাতে আসামি পালাতে না পারে। বাকিরা আগেই কলেজ প্রিফেক্টের রুমে চলে যেত। তারপর কয়েকজন মিলে ধরে বাকি যার যেখানে খুশি, যেভাবে ইচ্ছা “গাজুরিয়া মাইর” হতো। কেউ কেউ শুধু গণপিটুনিতে সন্তুষ্ট ছিল না,
Waseef
এর মত জন্তুরা বিভিন্ন ঝুলন্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধরে টানাটানি করতো! সে যাহোক, এই ঐতিহাসিক দৃশ্য দেখতে গিয়ে কয়েকজন আরও ঐতিহাসিক এক বিষয় দেখে ফেলল। এই গণতে রাগিবকেও সবার সাথে তাল মিলিয়ে কিল-ঘুষি দিতে দেখা গেল!

এই গণ মাঝে মাঝেই গণপিটুনিতে সীমাবদ্ধ থাকত না, মল্টিং নামক এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও মাঝে মাঝে নাদুসনুদুস ছেলেদের যেতে হতো। কোন এক প্রেয়ারের পর এই মহাপবিত্র কর্মযজ্ঞ শুরু হলো, ভিক্টিম
Apurba
। তিতুমীর হাউসের সবাই মহাসুখে এই মল্টিং প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। সোয়াদও সেখানে ছিল। কিন্তু সম্ভবত সবাই যে উদ্দেশ্যে মল্টিং দেয়, সোয়াদ সেই মজাটা পাচ্ছিল না; সোয়াদ পাচ্ছিল আদিমতম স্বর্গীয় সুখ! কে জানে, স্ট্যাট ফর্মে দেখা বুনি ছানাছানির কোন বিশেষ কাহিনী হয়ত সেসময় তার মাথায় ঘুরছিল। কথায় বলে কান টানলে মাথা আসে। সোয়াদের সেই কানে এমন টান পড়ল, যে মাথা দিয়ে “স্টিকি সাবস্টেন্স” বেরিয়ে এল। মাগরেবের নামাজের পর এই অসাধ্য সাধন করে কোন ফাঁকে সবার অলক্ষ্যে সোয়াদ বেরিয়ে এলো, তা জানা গেল না; তবে সেই পাজামা উদ্ধার করে এই গোপন তথ্য যে ছেলেটা ফাঁস করে দিল, সে ওই মাগরেবের ওয়াক্তে আজান দেয়া
Rakib
!

সোয়াদ একটা আজব চিড়িয়া। আমার মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে সোয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, আপনা থেকেই মন ভাল হয়ে যেত। আমি যতদূর দেখেছি, যার কর্মকাণ্ড যত খারাপ, তার মন তত ভাল। আমি সোয়াদের মনে কখনো কোন কুটিলতা দেখি নি। সোয়াদ যা কিছু করতো, হাসি-তামাশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। স্বার্থের কারণে কখনো সোয়াদকে কিছু করতে দেখি নি।

এই অসম্ভব ভাল মনের হাসিখুশি একটা মানুষকে আমার বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমার জীবনের অর্ধেক দুঃখ-কষ্ট হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। সোয়াদ, তোর নামে যে এত অপ্রিয় সত্য কথা বললাম, এজন্য মনে করবি না আমি তোকে খুব অপছন্দ করি। তুই মানুষ হিসেবে মন্দ না, জন্তু হিসেবে খুবই নিরীহ; তবে গরুর মত দুধ দিলে আরও উপকারী হতে পারতি। গরুর মত একজোড়া বিকট প্রকাণ্ড ওলান থকা সত্ত্বেও যে দুধ দিস না, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?

আজ আমাদের ব্যাচের সেক্সা আমার এই খুব প্রিয় বন্ধুটির জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন, সোয়াদ।

তোর জন্য অনুপমের একটা গান –
জলছবি, রং মশাল, স্কুলছুটির হজমিরা
রূপকথার অয়ায়রাদের গল্প বল
বন্ধু চল।
বন্ধু চল রোদ্দুরে, মন কেমন মাঠজুড়ে
গল্পেরা ওই ঘাসে, তোর টিমে তোর পাশে।



শব্দার্থ ও টীকা –
অভিজ্ঞ লাস্যময়ী তারকা – মধ্যবয়স্কা পর্নো তারকা, ভাষান্তরে Milf (যারা এটার পূর্ণরূপ জানিস না, তারা জানতে সোয়াদের সাথে যোগাযোগ কর।)
চুষে খাওয়ার খাদ্য – বাঁশিওয়ালা ললিপপ
বাবুই পক্ষী – পুরুষাঙ্গ
একদম জঙ্গল – অবাঞ্ছিত লোমে পরিপূর্ণ, উপমা প্রয়োগে সুন্দরবন বা আমাজন
বাবুই পাখির গায়ে সুড়সুড়ি দেয়া – তৈল সহযোগে পুরুষাঙ্গ মর্দনের একজাতীয় হারাম কাজ
স্টিকি সাবস্টেন্স – ছোট ছোট বাচ্চাদের পূর্বাবস্থা, অন্য অর্থে এক বিশেষ ব্যক্তির ব্যবহৃত শব্দবন্ধ
ওলান – দুগ্ধবতী গাভীর বাঁটের ওপরে সোয়াদের বুকের ন্যায় ফুলে থাকা অংশ

পরিশিষ্টঃ
এটা একটু বেশি নোংরা ছিল মনে হয়। এরপর থেকে সচেতন থাকার চেষ্টা করবো। আসলে সোয়াদের সম্পর্কে বললে নিতান্ত ভাল মানুষও হাই হয়ে যাবে!
পরবর্তীতে জানা গেল স্টিকি সাবস্টেন্স এর বিষয়টা অতিরঞ্জিত। তবে কাহিনী রক্ষার্থে মূল লেখায় কোন পরিবর্তন করলাম না।
React

Share with your friends!


Comments