Recent Posts

আমি তোমায় বেঁচে রই


আমার কারও জন্মদিন মনে থাকে না।
আমার বন্ধুরা জানে, আসলেই আমার কারও জন্মদিন মনে থাকে না।
যেমন, কয়েকদিন আগে
Chinmoy Deb Nath
এর জন্মদিন ছিল। আমার মনে ছিল না। মানুষের ডে দেখে বুঝলাম, চিন্ময় দ্য গ্রেট এর সেদিন জন্মদিন। তবে আমি উইশ টুইশ করি নাই।
অথচ চিন্ময়ের সাথে আমার অনেক ভাল বন্ধুত্ব। এখনো মনে হয়, কিছুক্ষণ পরে কেতাব স্যারের বই নিয়ে আমার কাছে সাইক্লিক পারম্যুটেশন বুঝতে আসবে। নাচতে নাচতে ৩৫ নম্বর রুমে এসে "বিচি বিচি" করবে।
এই পোস্ট চিন্ময়ের জন্মদিন নিয়ে না।

আজ জাহিনের জন্মদিন।
আমার বন্ধুরা এটাও জানে, আমি কারও জন্মদিনে তেমন একটা উইশ করি না। অথচ সবার সাথেই আমার ভাল সম্পর্ক। আমি জাহিনকে "শুভ জন্মদিন" জাতীয় কোন পোস্ট দিয়ে আমাদের একটা ছবিতে তৃতীয়জনের মাথায় জিভ বের করা কুত্তা জাতীয় স্টিকার দিয়ে ঢেকে কোন উইশ করব না। আবার বিশেষভাবে পচানি দিয়ে লিখে সিলেট যাওয়ার প্ল্যানও করব না।
খোলা চোখে তোকে ছয়বছর দেখেছি, তার আদলে লিখতে গেলে ছত্রিশবছর লেগে যেতে পারে। তবু সংক্ষেপে যা কিছু মনে আছে সেরকম কিছু লিখে ফেলা যায়।
যদি এ জাতীয় লেখার আরও সময় হয়, পরবর্তীতে অনেকের নামেই লিখতে পারি৷ আপাতত আজকের ভিক্টিম আমাদের জাহিন।

কালীগঞ্জ শিক্ষাঞ্চলের এই ছেলেটাকে আমি প্রথম দেখি রিকশায়। বাস্কেটবল গ্রাউন্ড পার হয়ে আমাদের ফলইনের ভেতর দিয়ে রিকশায় করে একটা হাস্যোজ্জ্বল ছেলে আসলো। আমরা প্রেয়ারের ফলইনে ছিলাম। কাওসার চলে যাওয়ার পর আমাদের হাউজে একজনের আসার কথা ছিল। সেই সীট পূরণ করতে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে এই ছেলেটা আমাদের কলেজে এবং আমাদের হাউজে এবং একইসাথে আমাদের ফর্মে আসে। রুম নম্বর ১০৭। ক্লাস সেভেনের ছোট্ট নিষ্পাপ
Ahmmed
থাকায় সেইরুম মোটামুটি একটা বিভীষিকা বলা চলে! আবার
Ishtiaque
এর প্রায় গোছানো সংসারে ভালমানুষ নির্লিপ্ত
Muntasin
। সেখানে নতুন করে জাহিন আসলো।
সেই জাহিন, যার ড্রিলের অবস্থা আমার মত, বা তার থেকে সামান্য ভাল (স্যালুট দিলে তিন আঙুল ফাঁক হয়ে থাকে, চেক মারলে কারও সাথে মিলে না বিধায় নিঃশব্দে মাটিতে বসিয়ে দিই)। যে মহিষের মত ঘামে (তার ভাষায় এটা ঘামন্ত রোগ)। যে ভাইয়াদের জুতা পালিশ পাওয়ার ভয়ে নিজের জুতা পালিশ না করতে করতে সত্যি সত্যি জুতা পালিশ ভুলে গিয়েছিল। যে ক্যাপ পরতে পারতো না, শার্টের ইন অর্ধেক খুলে থাকত! আমার সাথে তেমন একটা কথা টথা বলত না৷ যে তার গাইডলাইন আর ডিস্ট্রিক্টমেটদের প্রশংসায় সবসময় পঞ্চমুখ থাকত।
ক্লাস সেভেনের জাহিন সম্পর্কে এর বেশি কিছু তেমন মনে নেই।

ক্লাস সেভেনের জাহিন (বাঁ থেকে - মুনতাসিন, ইশতিয়াক, জাহিন)

ক্লাস এইটে ছোট্ট সংসার-গোছানো ইশতিয়াক আবার জাহিনের রুমমেট হল ১১৯ এ। কিন্তু বাকি দুইজন দিনাজপুরি শুয়োরের (!) (আর
Shahib
) সংস্পর্শে এই দুইটা ভাল ছেলে আরও বড় শুয়োর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। তবে জাহিনের ক্ষেত্রে সেই মাত্রাটা কম ছিল। শুয়োরকে হালকা জেনেটিক্যালি মডিফায়েড করে "শু-য়ার" বলে যাকে তাকে গালি দেওয়া ছাড়া সর্বোপরি জাহিন ভালই থাকল।
কিছুদিন যেতে যুক্তিযুক্ত কারণবশতঃ জাহিনের নাম "ট্যাঁও" হয়ে গেল। এই যুক্তিযুক্ত কারণ ভদ্র সমাজে বলতে আমার কোন দ্বিধা নাই, কিন্তু জুনিয়রসমাজে বললে অনেকে সেটা নাও পছন্দ করতে পারেন! এই "ট্যাঁও" নিয়ে যথারীতি ১৯ নম্বর রুমে অনেক ফ্যান্টাসি (!) চলতে থাকল।

এর মধ্যেও জাহিনের সাথে আমার খুব মাখামাখি ধরণের সম্পর্ক গড়ে উঠে নি৷ তবে সম্ভবত জেএসসি র ছুটির ভেতরেই জাহিন ফেইসবুকে রীতিমত সেলিব্রেটি হয়ে গেল। প্রথমত, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর হাউজ (সিসিআর এর গ্রীন হাউজ) এর নামানুসারে তার ফেইসবুক একাউন্টের নাম ছিল Zahin_BJH, দ্বিতীয়ত, নারী সমাজেও (জিসি) তার একটা আলাদা ভুবন রচনা হয়ে গেল৷ এ সময় দেখা গেল, ইফাজ আর জাহিন প্রায়ই ছুটির পর কলেজে এসে এমন সব বিষয়ে গল্প করতে থাকল, যা আমার মত আমজনতার জন্য শক্তি স্যারের বোটানি ক্লাসের চেয়েও দুর্বোধ্য। ফলস্বরূপ, একটি বিশেষ গান চালু হওয়ার সাথে সাথেই উভয়ে সমানভাবে টীজ খেতে থাকল।

নাইন ডে'জ এক্সকার্শন

এভাবে ক্লাস এইট চলে গেল। এখানে জাহিনের সাথে সম্পর্কিত না হলেও একটা কথা উল্লেখ করা যায়। জেএসসি র ছুটির কিছুদিন পর কোন একটা কারণে জাহিনের রুমমেট ইশতিয়াকের সাথে আমার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় এং সেটা প্রায় মাস দুয়েক স্থায়ী ছিল৷ আমার ক্ষুদ্র জীবনে কোন কিছুর জন্য আমি অনুশোচনা করি না, কিন্তু আমি নিশ্চিত যখন হাড় জিরজিরে বুড়ো হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করব, যখন সামনে কেবল ধুধু অবসর, আগের জীবনের ধুসর স্মৃতিচারণ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না (যদি ততদিন বাঁচি) তখন মনে হবে এই ছোট্ট জীবনের দুইটা মাস এভাবে নষ্ট না করলেও পারতাম।

আমরা নাইনে উঠলাম। সৌভাগ্যক্রমে, আমি ১২৩ নম্বর রুম পেলাম, সামনেই টিভিরুম। এখান থেকে বাইরে তাকালেই টিভি দেখা যায়। গতবছর বিশ্বকাপ থাকায়, খাঁচার ছোট্ট টিভি বিদায় নিয়ে সেখানে তখন বিরাট এলইডি টিভি। দরজা দিয়ে তাকালেই হিন্দি গানের উদ্দাম নাচ চোখে পড়ে। তখন বোধহয় সানি লিওনের কোন একটা হিট গান চলছিল। পুরো "চাঁদের হাট" টাইপ ব্যাপার, ক্লাস নাইন, পড়াশোনার চাপ নাই, নতুন নতুন সিনিয়র, নতুন বাথরুম, একাডেমিক ব্লক, গলা ছেড়ে গান, টেবিলে হাত রেখে খাওয়ার ফ্রিনেস, জুনিয়র গ্রুপের লীডিং, রুম থেকে চোখ মেললেই আবেদনময়ী হিন্দি ছবির নায়িকারা উপস্থিত - এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে?

এর থেকে ভাল আরেকটা যে বিষয় ছিল, অন্যকথায় এই বিষয়গুলোকে পূর্ণতা দিয়েছিল, সেটা হল আমার ক্লাস নাইনের রুমমেট। আর এই চার রুমমেটের মধ্যে জাহিন ছিল একজন।
জহিনের রুমমেট হওয়ার ফলস্বরূপ ক্লাস নাইনে তেইশ নম্বর রুমের বাসিন্দা হিসেবে আমার যত ছবি আছে, বাকি জীবনের সব ছবি একত্র করলেও এত ছবি হবে না। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ক্যাডেট কলেজের ছয়বছরের জীবনে ক্লাস নাইন আমার কাছে অন্যতম প্রিয় একটা বছর। এর প্রধান কারণ আমার চার রুমমেট, জাহিন,
Firdous
আর
Islam
। আর গৌণ কারণ আমার পাশের রুমের বিচ্ছুগুলা, ইশতিয়াক, ইফাজ,
Hamim
আর শাহীব। সারাবছরই তেইশ আর চব্বিশের এই আটজন গুঁতাগুঁতি করে আসছি। রাতে চব্বিশ আমাদের একজনের জন্য গান গাইতো, জাগে পাখি, খোলো আঁখি....। আমরা জবাব দিতাম দেয়ালে লাত্থালাত্থি করে, ওরাও পাল্টা জবাব দিত, দৌড়ে দরজা লাগিয়ে দিত। কোন সমস্যা হলে মুখ খারাপ করার জন্য ফিরদৌস রেডি থাকত৷ আহা, কী দিন ছিল!

এসবের মধ্যে জাহিনও শামিল থাকত। কোনদিন রাত জেগে আড্ডা, কিংবা মুড়ি পার্টি, খাবার নিয়ে ফিরদৌসের কাড়াকাড়ি, ছুটি থেকে আসার রাতে কারও চোখে ঘুম নাই, কত আকাশপাতাল আড্ডা, হাসি, গান... আহা, কী রাতও ছিল!

ক্লাস নাইনে জুনিয়র গ্রুপের ফুটবলে বেস্ট প্লেয়ার হয়ে হাউজের ফুবল ট্রেডিশন ধরে রাখতে অনেক অবদান ছিল তোর।

সিনিয়র গ্রুপের বেস্ট প্লেয়ার

ইলেভেনের ভাইয়েরা এক্সকারশনে যাওয়ার পর পুরো ব্লক প্রায় আমাদেরই, একসাথে কত কী! এগুলো উল্লেখ করার কারণ, এখানে সবার সাথে জাহিনও ছিল। সত্যি বলতে, জাহিনের একার গল্প আসলে তেমন কিছুই নাই, কিন্তু সবার সাথে জাহিনের গল্প ছাড়া কোন গল্পই নাই! তুই আমাদের সবার সাথে এমনভাবে মিশে থাকতি, যে মনে হত পুরো উনচল্লিশতম ইনটেকটার একটা ছবি, নিজের জন্য এতটুকু ভাবনা নাই, সবার কী হবে এই চিন্তাই সবসময় আচ্ছন্ন করে রাখতো! এর পরিচয় আমি পরে ভালভাবে বুঝেছি, পরে মনে থাকলে উল্লেখ করারও চেষ্টা করব।
ক্লাস টেনে অনেক কিছু হয়ে গেল। ব্লক পেলাম না, একবেলা অনশন করলাম। রুমমেট নিয়েও কিছু বিশ্রী ব্যাপার হয়ে গেল৷ এরকম খারাপ সময়ে নিরপেক্ষ জাহিন আর কারও কাছে না হোক, আমার কাছে একটা আস্থা ছিল।
এমন কিছু মানুষ থাকে, ধরেন, সবকিছু কীভাবে জানি ব্যবস্থা করে ফেলে, যত কঠিনই হোক। মনে করেন আমার জরুরি ব্লাড লাগবে, অনেকে চেষ্টা করছে ব্যবস্থা করতে, এমন সময় জাহিন এসে বলল, মোহাইমিন, চিন্তা করিস না। আমি দেখি। ওইটুকু না বললেও হয়ত অন্যরা ব্যবস্থা করে ফেলত, কিন্তু ওই কথাটুকু অন্য কারও কাছে শুনলে আমি যতটা ভরসা পেতাম, তার থেকে অনেক বেশি ভরসা তোর কাছে পাই। ক্যাডেটজীবন তো শেষ, কিন্তু কিছু না করতে পারলেও এভাবে ভরসা দেয়ার জন্য হলেও, মাঝে মাঝে পাশে থাকিস...।

টেনে একসাথে অনেক কিছু করলাম, কিন্তু তোর সাথে সিলেট যাওয়ার প্ল্যান আমি কখনো ভুলব না৷ সেই দুঃসময়ে দুইজন মানুষ আমার সবথেকে পাশে ছিল, একটা তুই, আরেকটা
সিগবাদ
।মৃত্যুর তিনদিন আগে যদি আজরাইল এসে বলে তোমার শেষ কয়েকটা দিন তুমি কোন প্রিয়জনকে দিয়ে যেতে চাও কিনা, সেখানে আমি সিগবাদের জন্য একদিন বরাদ্দ রাখব।

টেনে উঠতে উঠতে এমন একটা ব্যাপার, কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জাহিনের পরামর্শ আবশ্যক হয়ে দাঁড়ালো।

১৩৮ নম্বর রুম

ইতোমধ্যে ইচ্ছা করে টয়রামি করতে করতে ততদিনে তুই সত্যিকারের টয়রা হয়ে গেছিস।
Toukibul
এর রুমমেট হয়ে দুইজন একসাথে আরও বড় টয়রা হয়ে গেলি! এইসময় আমি প্রায়ই তোদের রুমে রাতে আড্ডা দিতাম, একদিন ইসরাইল স্যারের কাছে ধরা খেয়ে আরিফ স্যারের কাছে ছাগল উপাধি পেলাম। রাতে প্রিন্সিপাল এসে দেখে সবাই ঘুমাচ্ছে, আমি একাই তোদের রুমে জেগে বসে আছি! স্যার কিভাবে জানবে সবকয়টা তার আসার আওয়াজ পেয়ে নিজ নিজ বেডে ঘুমানোর নাট্যায়োজন করছে! এদিকে আমি অন্যরুমের, আমার তো কোন বেড নাই!

এসএসসি র ছুটিতে একসাথে দেওয়া মিনি ট্যুরের ব্যাপারেও সারাজীবন মনে থাকবে।

ইলেভেনে উঠে নির্লোভ কিন্তু নিবেদিতপ্রাণ মানুষের সংজ্ঞা আমি নতুন করে বুঝেছি। কোন ক্ষমতার লোভ ছাড়া, এত নিঃস্বার্থভাবে হাউজের গেমস, যেকোন কম্পিটিশন, এমনকি ক্যাডেও তুই যেভাবে পর্দার আড়াল থেকে লীড দিয়ে গেছিস, আমি নিশ্চিত তুই ছাড়া হাউজের কোন কম্পিটিশন মাঠে কিংবা মঞ্চে গড়াতো না। আর ব্যক্তিগতভাবে সব কাজে তোকে কাছে পেয়েছি, দেখা গেছে প্রয়োজনের সময় না ডাকতেই কিভাবে যেন মুশকিল আসান হয়ে সামনে চলে আসতি!

তোর মধ্যে তো জীবনেও ডিসিপ্লিন নামের বস্তু ছিল না, টার্ন আউটে সবসময় ধরা খেয়ে আসছিস, এসময় দেখা গেল প্রায় গেমস টাইমেই তোর কাঁধে ইডির ব্যাগ। মানুষ যে টার্ন আউটের ব্যাপারে কতটা উদাসীন হতে পারে, একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কোন একটা কারণে তোর ডানপায়ের গেমস শু ভেজা ছিল, আরেকজোড়ার ডানপাটি সম্ভবত খুঁজে পাচ্ছিলি না। অত চিন্তার টাইম আছে নাকি! দুইপায়েই বামপায়ের জুতা পরে গেমস ফলইনে হাজির আমাদের জাহিন! তারপর আর কী! ধরাও পড়লি মনে হয় কোন স্টাফের কাছে জানি। সাধারণ জুতা পালিশ তো সবাই মিস দেয়, কয়জন লিজেন্ড দুইপায়ে একই জুতা পরে ফলইনে যায়?


ইলেভেন টুয়েলভে পরীক্ষার সময় জাহিনের রুমে গেলে একটা কমন চিত্র ছিল। সারাবছর সে কোন বই পড়ে নাই, কোন ক্লাসও করে নাই। পরীক্ষার আগের লাস্ট ক্লাসে জাহিনের মত মনোযোগী ছাত্র আমি জীবনে দেখি নাই।

“লাস্ট ক্লাসে এই অংকটা করানোর সময় জেনিফার ম্যাডাম একটূ হাসছিল, মনে হয় এই অংকটাই পরীক্ষায় দিবে!”

“লাস্ট ক্লাসে সাজেশান দেওয়ার সময় দিলারা ম্যাডাম নিউক্লিওফিলিক সাবস্টিটিউশনের কথা বারবার বলছিল, এটা কীরে মোহাইমিন? কোন বইয়ে আছে?”

“গত বছরের প্রশ্নে হাকিম স্যার এটা দিসিল, এটা খাতায় করে দে তো, মুখস্থ করি।“

“কালকে কেতাব স্যারের পরীক্ষা। অংক বই পড়ে লাভ নাই, আগের প্রশ্ন সল্ভ করেও লাভ নাই; নামাজ শিক্ষা পড়তে বসি।“ (জাহিনের টেবিলে সবসময় একটা নামাজ শিক্ষা থাকত, পরীক্ষার আগে সে এটার সদ্ব্যবহার করত বলে আমার বিশ্বাস।)

এখানে উল্লিখিত কোন বাণীতেই কিছু অতিরঞ্জিত করা হয় নি।

এই যে ক্লাস সেভেন থেকে ইলেভেন থেকে আস্তে আস্তে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো, সেই গ্রাফটা সম্ভবত টুয়েলভে উঠে স্থির ছিল, আলাদাভাবে কিছু বাড়ে নি, তবে এক ফোঁটা কমে নি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সবাই টুয়েলভে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ আমার মতে আমাদের হাউজের আমাদের ইনটেকের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়টা ছিল ভাইয়ারা যাওয়ার যাওয়ার আগে। এই বেপরোয়া ভাবটা তুই না থাকলে রীতিমত একটা বিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটে যেত। লীডার না হয়েও কিভাবে লীড দেয়া যায়, হাউজ চ্যাম্পিয়ন করে তোদের রুম বুঝিয়ে দিল। অবশ্যই সেখানে সবার অবদান ছিল, কিন্তু ননপ্রিফেক্টদের মধ্যে এমনকি কোন কোন প্রিফেক্টের চাইতে অবশ্যই ১৩৮ এর দুইজনের অবদান বেশি ছিল৷ এথলেটিক্সের শেষের দিকে হাউজ চ্যাম্পিয়ন হবে জেনে কীরকম পাগল হয়ে গেলি, শেষ ইভেন্টের পর যখন সত্যি সত্যি দীর্ঘ সময় পর হাউজ চ্যাম্পিয়ন হল, কীরকম আত্মহারার মত করে কাঁদলি এসব মনে হলে আমার মত গোবেচারা মানুষও নির্ঘাৎ শিউরে উঠে!
ফেয়ারওয়েলে এতজনকে কাঁদতে দেখলাম, তোর মত আকুল হয়ে কাউকে কাঁদতে দেখি নাই!

আমার মনে আছে, কেউ একজন বলেছিল, ফেইসবুকের নামে হাউজ ফিলিংস, কিন্তু কাজের বেলায় কিছু নাই! এই কথার পর তুই নাম চেঞ্জ করলি, এবং শেষমেষ কী দুর্জয় সংগ্রাম করে প্রমাণ করলি, জাহিনের সবকিছু লোকদেখানো হয় না৷


আমি এতদিন তোকে চিনি, অথচ কোনদিন তোকে চিনতে পারলাম না! এত রহস্যময় থাকতেই হয়ত তোর ভাল্লাগে। একটা বিষয়ের জন্য তোকে সবথেকে আলাদা লাগে, সেটা হল, ভয়ংকর দুঃসময়েও নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা। সবসময় দশজনের কথা মাথায় রেখে এভাবে কারও বিপদে আমি কাউকে লাফাতে দেখি নি। ফর্মে তো প্রায় আমার পাশেই বসতি। বইয়ের দিকে তাকায় কী সব আবোলতাবোল ভাবতি! আর ইশতিয়াক টেনশনে চোখ কুঁচকে শুধু বলত, কিছু পড় জাহিন, অন্তত কিছু তো পড়!
আমার যতদূর মনে পড়ে, কলেজে আমি এমন কোন রুমের দরজা, লকার, টেবিল, চেয়ার, ফর্মের ডেস্ক, বাথরুমের কমোড (এটা মনে হয় একটু বেশি বলে ফেললাম!) দেখি নাই, যেখানে জাহিনের নাম দেখি নাই! এত চিপায় চাপায় হাতাহাতি করার অভ্যাস কবে থেকে ভায়া? ভাল হয়ে যাও!

তোর জন্মদিনে এত বড় লেখার আরেকটা কারণ আছে, তুই আমার খুব ভাল বন্ধু এটা কোন কারণ না। আমার আরও অনেক খুব ভাল বন্ধু আছে, তাদের জন্মদিনে আমি কিছু লিখি নাই। সবার জন্মদিনে তুই কিছু না কিছু করিস। যেমন, ইসলামের জন্মদিনে লিখতে বললি, সবার জন্মদিনে নিজেই লিখলি। জন্মদিন ছাড়াও আন্তঃ ক্যাডেট কলেজ পাত্রপাত্রী বাজার, লিজেন্ডস অফ ২০১৩ ইনটেক এইসব গ্রুপে আমাদের কলেজের একমাত্র হয়ে কতজনের জন্য কত কিছু লিখলি! আমার বিশ্বাস, যখন আমি বুড়ো হয়ে সব ভুলে যাব, তখন আমার জন্মদিনে তোর শুভেচ্ছা দেখে মনে পড়বে জাহিন নামে আমার একটা অসভ্য বর্বর বন্ধু ছিল। হাসান ভাই তোকে এই উপাধি দিয়েছিল, সভ্যতার আলো থেকে অনেক দূরে!

এক্স ক্যাডেট হয়েও নিজের কথা, নিজের সাফল্য নিয়ে লাফালাফি না করে অবলীলায় সবার জন্য নিজেকে তুচ্ছ জ্ঞান করলি! কোন একটা কারণ ছাড়াই আমাকে একটা এক্সক্যাডেট টিশার্ট উপহার দিয়েছিলি, সেজন্যও এই পোস্টের সাহায্যে ধন্যবাদ দিলাম।

শেষে তোর অশেষ কোয়ালিটির কিছু উল্লেখ করে দিই। ক্লাস সেভেন থেকেই হাউজের গুরুত্বপূর্ণ এথলেট, সিনিয়র ও জুনিয়র গ্রুপ দুইটাতেই ফুটবলে বেস্ট প্লেয়ার, এফএমের মাঠে কাদা না থাকলে ওখানেও ভাল কিছু করত, গান, আবৃত্তি, নাটক, কাওয়ালি, অভিনয়, কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা, ডিউক অফ এডিনবার্গহ অনেক আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত এই ছেলেটার কথা উনচল্লিশতম ইনটেক সারাজীবন মনে রাখবে এইচএসসির সেই অশেষ সাহায্যের জন্য!
জাহিন, আমাকে মনে রাখিস, আমাদের মনে রাখিস। এই দুঃসময়ে সুস্থ থাকিস। আমরা চাই, তুই ভাল থাক। তোকে পচানোর জন্য লিখতে গিয়ে মনখারাপ হয়ে গেল, আর কিছু লিখব না আজকে।

আমার সাথে জাহিন

টুয়েলভে যতদিন গ্রীল খুলে দেওয়া ব্লকে চাঁদের আলোয় আড্ডা হতো, তোকে সবসময় পেয়েছি। যখনই বিপদে পড়েছি, কী অদ্ভুত শক্তিতে ভরসা দিয়ে গেছিস। নাইন থেকে প্রায় সব এক্সকারশনে একসাথেই ঘুরতাম। যখন কোন ব্যাচের সাথে সম্পর্ক শীতল হয়ে গেছে, কী নিপুণভাবে সবকিছু সামাল দিতি।
আর কারও কথা মনে রাখিস বা না রাখিস, স্বার্থপরের মতো আবদার, সারা জীবন তোকে ভরসা হিসেবে পাশে চাই; ঠিক যেমন ফেয়ারওয়েলের দিন অনেক কষ্টে চেপে রাখা এক দমক কান্না তোর কাঁধে খাকি জীবনের শেষ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল।

"কিছু কথা, কিছু ব্যথা; কিছু সময় বয়ে যায়
আলো থেকে আঁধারেতে রং বদলায়
তুমি এসো ভালোবেসো, আমি তোমায় বেঁচে রই
বন্ধু গো আজ তোমায় বড় বেশি প্রয়োজন।"
(এটা চিরকুটের একটা গান)


শুভ জন্মদিন,
জাহিন
React

Share with your friends!


Comments