"আমি তোমাকে ভালবাসি" এর শব্দগুলোকে মোট কতভাবে সাজানো যায়? আসুন চেষ্টা করে দেখি।
১. আমি তোমাকে ভালবাসি।
২. আমি ভালবাসি তোমাকে।
৩. তোমাকে আমি ভালবাসি।
৪. তোমাকে ভালবাসি আমি।
৫. ভালবাসি আমি তোমাকে।
৬. ভালবাসি তোমাকে আমি।
আরেকবার বাক্যগুলোর দিকে তাকান। খেয়াল করলে দেখবেন এর সবগুলোই সমান অর্থবহ।
আপনি ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষায় এরকম বিষয় পাবেন না। যেমন I love you কে যদি
লেখা হয় You I love তাহলে তা কোনভাবেই কোন অর্থ প্রকাশ করতে পারে না! এই
বিষয়টি প্রথম জানতে পারি মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের একটি বইয়ে।
বিন্যাসের সাধারণ ধারণা
কথায় কথায় অন্য প্রসঙ্গে চলে এলাম। তাহলে "আমি তোমাকে ভালবাসি" বাক্যটিকে
ওলটপালট করে মোট ছয়ভাবে লেখা যায়। শুধু এই বাক্য নয়, যেকোন তিনটি জিনিসকেই
মোট ছয়ভাবে সাজানো যায়। কোত্থেকে ছয় এলো? আপনি ভাবুন, প্রথম শব্দটি বসানোর
জন্য আপনার হাতে অপশন ছিল তিনটি (আমি বা তোমাকে অথবা ভালবাসি)। মনে করুন,
প্রথমে বসালেন 'আমি'। এবার দ্বিতীয় শব্দটি বসানোর জন্য দেখবেন এবার আপনার
সাথে অপশন দুইটি (তোমাকে বা ভালবাসি)। কিংবা প্রথমে অন্য কিছু বসালেও
দ্বিতীয়টি বসানোর জন্য অপশন দুটি। তাহলে প্রথম দুটি বসানোর মোট উপায় $3
\times 2 = 6$ টি (আমি এর সাথে তোমাকে/ভালবাসি, তোমাকে এর সাথে আমি/ভালবাসি,
ভালবাসি এর সাথে আমি/তোমাকে)। এবার শেষ শব্দটি বসানোর পালা। প্রথম দুটি
বসানোর পর শেষ শব্দটি বসানোর জন্য অপশন মাত্র একটিই। তাহলে মোট উপায় $3
\times 2 \times 1 = 6$।
একইভাবে পাঁচটি জিনিসকে সাজানোর মোট উপায় $5 \times 4 \times 3 \times 2
\times 1 = 120$। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, n টি জিনিসকে মোট সাজানো যায়
$n(n-1)(n-2)(n-3)......3.2.1$, অর্থাৎ 1 থেকে n পর্যন্ত সব সংখ্যার গুণফল।
একে আমরা সংক্ষেপে বলি n! (n factorial)।
এবার আরেকটু জেনে নেয়া যাক। পাঁচটি জিনিস থেকে তিনটি জিনিস নিয়ে মোট কতভাবে
সাজানো যাবে? প্রথমটি নেয়া যায় পাঁঁচভাবে, পরেরটা চারভাবে, তারপরেরটা
তিনভাবে। আর যেহেতু জিনিস নেয়ার দরকার নেই, তাই মোট সজ্জা $5 \times 4 \times
3 = 60$ টি। একে আবার লেখা যায় $\frac{(5 \times 4 \times 3 \times 3
\times 2 \times 1)}{2 \times 1} = \frac{5!}{2!} = \frac{5!}{(5-3)!}$।
এখান থেকে একটা ফর্মুলা বানানোর চেষ্টা করা যাক। n সংখ্যক জিনিস থেকে x সংখ্যক জিনিস সাজানোর মোট উপায় $^nP_x = \frac{n!}{(n-x)!}$।
এপর্যন্ত আমরা মোটামুটি সবাই জানি। এখন আমাদের আলোচনার মূলবিষয়বস্তু। 0! এর মান কত?
0! এর মান (গাণিতিক প্রমাণ)
আমরা শুরুতেই জেনেছি n সংখ্যক জিনিস দিয়ে মোট বিন্যাস n!। আবার ফর্মুলা
অনুসারে, $^nP_n = \frac{n!}{(n-n)!}$।
অর্থাৎ, $n! = \frac{n!}{0!}$, যার মানে দুপাশ থেকে n! কেটে দিলে আসে 0!=1।
কোথাও কী ভুল হল? এটা কী করে সম্ভব? আসুন অন্যভাবে চেষ্টা করে দেখি।
$n! = n(n-1)(n-2)(n-3)....3.2.1 = n (n-1)!$
$\implies \frac{n!}{n} = (n-1)!$
এখানে $n = 1$ বসিয়ে পাই,
$\implies \frac{1!}{1} = 0!$
$\therefore 1 = 0!$
এবারও একই ফলাফল। আসলে যেভাবেই প্রমাণ করা হোক না কেন, মানতে যতই কষ্ট হোক না কেন, শূন্য ফ্যাক্টরিয়ালের মান সবসময়ই এক!
0! এর মান (অ-গাণিতিক প্রমাণ)
আসুন গাণিতিক ব্যাখ্যা ছেড়ে একটু উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। যোগের বিষয়টা
ভাবুন। একটা যন্ত্র আছে, যেখানে আপনি একটা সংখ্যা ইনপুট দেবেন। যন্ত্রটি তার
পূর্বের আউটপুটের সাথে সেটি যোগ করে আউটপুট দেবে। যেমন, যন্ত্রটির আগের
আউটপুট ৩৫। আপনি ইনপুট দিলেন ৭। যন্ত্রের আউটপুট হবে ৪২। আবার আপনি ৩ ইনপুট
দিলেন, এবার আউটপুট হবে ৪৫। এবার ভাবুন, যন্ত্রটিতে যখন প্রথম সংখ্যাটি ইনপুট
দেয়া হল, তখন সেটি কার সাথে যোগ করা হয়েছে? যন্ত্রটির ফাংশনকে সংজ্ঞায়িত করতে
হলে, শুরুতে যন্ত্রটিতে শূন্য ছিল। অর্থাৎ শুরুতে যদি আপনি ইনপুট দেন ৮,
যন্ত্রটি আউটপুট দেবে ৮। কিভাবে ৮ এলো? ৮+০=৮। এইজন্য শূন্যকে বলা হয় যোগের
অভেদক।
আর গুণের ক্ষেত্রে কী? এবারের যন্ত্রের কাজ আগের আউটপুটের সাথে নতুন ইনপুট
গুণ করা। যেমন, আগের আউটপুট ৪, নতুন ইনপুট যদি ৩ হয় তাহলে এবার আউটপুট হবে
১২। তাহলে এবার শুরুতে কত গুণ করা হয়েছিল? এবার শুরুতে শূন্য থাকলে যাই ইনপুট
দেয়া হোক না কেন, সবসময়ই আউটপুট হবে শূন্য! তাহলে এক্ষেত্রে শুরুতে ছিল এক।
আর এটি হল গুণের অভেদক।
এবার ফ্যাক্টরিয়ালের সংজ্ঞাটা আরেকবার ভাবুন। 1 থেকে n পর্যন্ত সংখ্যার গুণফল হল n!। তাহলে শূন্য ফ্যাক্টরিয়াল হল যন্ত্রের একদম শুরুর অবস্থা, আর এটি হল 1। তাই, 0!=1।
এবার ভাবুন ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার ফ্যাক্টরিয়াল কত হবে? (Hint: $\frac{n!}{n}
= (n-1)!$ এখানে n এর মান 0 বসিয়ে দেখুন।)
আরও জানতে
Comments
Post a Comment