Recent Posts

রাগীবের জন্মদিন এবং তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা


Ragib

ঘটনা ০১।

ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার সবে চারদিন পেরিয়েছে। মিল্ক ব্রেকের পর জানা গেল এখন পাবলিক স্পীকিং ক্লাস হবে। সবাইকে সামনে গিয়ে বক্তৃতা দিতে হবে। বিষয় “ক্যাডেট কলেজে প্রথমদিন”। রাশেদ স্যার এসে বসলেন ভিজিটর্স ডেস্কে। একে একে সবাই যাচ্ছে, দুয়েকলাইন বলে চলে আসছে। আমি জীবনে সামনে গিয়ে কোন কথা বলি নাই। নিবিষ্ট মনে এজীবনে যত দোয়া শিখেছি, সব এক এক করে পড়া শুরু করলাম, যেন আমার না বলতে হয়। কিন্তু কেউই এক-আধমিনিটের বেশি বলছে না। 


আস্তে আস্তে ক্যাডেট নম্বর গিয়ে ঠেকল ১৯৩১ এ। আর একজন পরেই আমি। আমার তো

“ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি” অবস্থা! এক ছেলে দেখি শুদ্ধ উচ্চারণে বলতে শুরু করলো, বলতেই থাকলো। এর মধ্যে ঘণ্টা বেজে গেল! শেষমেষ সেই ছেলেটা আমাকে বাঁচিয়ে দিল।



ঘটনা ০২।

টিটি রুম হলো জুনিয়রদের কাছে একটা ত্রাস। আমরা তখন ক্লাস নাইনে। ওমর ফারুক হাউজের সবার ডাক পড়ল টিটি রুমে। সেই বন্ধু আবার এক ভাইয়ের সুনজরে ছিল। সুতরাং ভাই তাকে আলাদা করে ডেকে চেষ্টা করলেন এই বিভীষিকা থেকে রেহাই দিতে। 


তখন হাজির হলেন মজলুম জনতার নেতা, সাম্যের বিমূর্ত প্রতীক মাহমুদুল ভাই। আরেকটা কারণে ভাই আমাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন। মাহমুদুল ভাইয়ের জেপিশিপের সময় আমাদের একজন হাসাহাসি করছে। ভাই বললেন, “এখানে জেপি টকিং, আর তোমরা লাফিং!” সেইদিন থেকেই ভাই আমাদের আমজনতার কলেজ প্রিফেক্ট হয়ে গেলেন। 


যাই হোক, ভাই সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে আসলেন। সেই বন্ধুকেও অন্য সবার মতোই ভাগ্য বরণ করে নিতে হলো! তারপর থেকে দেখি, চেয়ারে বসার আগেও বন্ধু দুইবার ভাবে!


ঘটনা ০৩।

কলেজ থেকে আসার পরও আমরা মোটামুটি একসাথেই ছিলাম। সুতরাং তখনও তেমন একটা শুন্যতা অনুভব করি না। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার পর ঢাকা ছেড়ে বাড়ি ফিরলাম। অনেকদিন বন্ধুদের সাথে দেখা হয় না। মনে হয়, জলের মাছ ডাঙায় এসে পড়েছি। শ্বাস নিতে পারি না। 


এভাবে বেশিদিন থাকা সম্ভব না। গেলাম সিলেটে পরীক্ষা দিতে, সবার সাথে দেখা হবে। রাত সাড়ে আটটার বাসে চেপে বসলাম। এগারোটা নাগাদ বাস থামলো ফুড ভিলেজে। আমি বাইরে আসলাম। তখন একটু একটু বৃষ্টি পড়ছে, আর কী বাতাস! আমি বৃষ্টির মধ্যে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা করছি। হঠাৎ দেখি সেই বন্ধুও ফুড ভিলেজে! আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে! অনেকদিন পর একটা পরিচিত মুখ দেখে সেদিন যে কী ভালো লাগলো! পরে শুনলাম, বন্ধু গিয়েছিল সোহাগ ভাইয়ের আমন্ত্রণে। ঢাকা থেকে ফেরার পথে ফুড ভিলেজে এসেছে। 


বাস চলতে শুরু করলো। কানে এয়ারফোন গুঁজে দিলাম। বাইরে হু-হু বাতাস। জানালা দিয়ে অল্প অল্প বৃষ্টির ছাঁট আসছে। একের পর এক লাইটপোস্ট দূরে সরে যাচ্ছে। তখন চিরকুটের গান বাজছে, “ওরে আমার দুনিয়া, তোর সাথে কিসের মায়া মমতা।”


কেন জানি না, আমার দুচোখ জলে ভিজে উঠলো।


সমাপ্তি

অনেক দূর থেকে সেইসব দিনগুলির চলে যাওয়ার পদশব্দ আমি শুনতে পাই। ন্যাফথালিনে ভরা পুরনো বাক্সে বন্দি সেইসব দিনগুলির ফেলে যাওয়া মৃদু ঘ্রাণ আমার নাকে আসে। 


আমার সেই বন্ধুটির আজ জন্মদিন। 


আমি সচরাচর মেধা দিয়ে মানুষ বিচার করি না। আমার কাছে ভাল মানুষের সংজ্ঞা অন্যরকম। কেউ কেউ সংজ্ঞাও ছাপিয়ে যায়। শুভ জন্মদিন রাগীব! 



আগস্ট ১৪, ২০২০

রাগীবের জন্মদিনে।



পুনশ্চঃ 

অনেকের জন্মদিন আসে, তেমন কারওটা মনে থাকে না। মর্জিমাফিক দুয়েকজনের জন্য দুকলম লিখি, কারও জন্য লেখা হয় না। ভাবলাম, আজকের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না!

৫৪ জনের জন্য লেখার যে প্রজেক্ট আমি হাতে নিয়েছি, এই লেখা তার অন্তর্ভুক্ত না।

React

Share with your friends!

Comments